কিশোরগঞ্জ জেলা

কিশোরগঞ্জের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য

কিশোরগঞ্জ জেলা বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চলের ঢাকা বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল এবং ঢাকা বিভাগের সর্বশেষ জেলা। কিশোরগঞ্জ জেলার ব্র‍্যান্ড নাম হলো “উজান-ভাটির মিলিত ধারা, নদী-হাওর মাছে ভরা”। কিশোরগঞ্জ ঢাকা বিভাগের দ্বিতীয় বৃহৎ জেলা। কিশোরগঞ্জের ভৌগোলিক আয়তন প্রায় ২,৬৮৯ বর্গ কিলোমিটার।

এই জেলার সীমান্তে রয়েছে:

রাজধানী ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জের দূরত্ব ১৩৫ কিলোমিটার। সড়ক অথবা রেলপথে সহজেই ভ্রমণ করা যায়।

দর্শনীয় স্থানসমূহ

শেখ সাদী জামে মসজিদ

শেখ সাদী জামে মসজিদ

শেখ সাদী জামে মসজিদটি বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলার এগারসিন্ধুর গ্রামে অবস্থিত একটি প্রাচীন মসজিদ।

অবকাঠামো

মসজিদটি দেখতে বর্গাকার, প্রতিটি দেয়ালে রয়েছে পোড়ামাটির কারুকার্য।

যাওয়ার উপায়

কোথায় থাকবেন

কিশোরগঞ্জ শহরে বিভিন্ন মান ও দামের আবাসিক হোটেল রয়েছে। বিলাসবহুল হোটেলের মধ্যে উল্লেখযোগ্য:

ভ্রমণের উপযুক্ত সময়

কিশোরগঞ্জ ভ্রমণের সেরা সময় শীতকাল (নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি)। এই সময়ে আবহাওয়া সুন্দর থাকে এবং হাওর অঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।

স্থানীয় খাবার

কিশোরগঞ্জের বিশেষ খাবারের মধ্যে রয়েছে:

যা মনে রাখবেন

জঙ্গলবাড়ি দূর্গ

জঙ্গলবাড়ি দূর্গ (Jangalbari Fort)

বাংলার বারো ভূঁইয়াদের প্রধান মসনদে-আলা বীর ঈশা খাঁর দ্বিতীয় রাজধানী জঙ্গলবাড়ি দূর্গ। এটি কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ উপজেলার জঙ্গলবাড়ি গ্রামে নরসুন্দা নদীর তীরে অবস্থিত। মধ্যযুগীয় এই স্থাপনাটি ২০০৯ সালে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর কর্তৃক সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

ইতিহাস

ঈশা খাঁর স্মৃতিবিজড়িত জঙ্গলবাড়ি দূর্গটি কোচ রাজা লক্ষ্মণ হাজরাকে পরাজিত করার পর দখল করেন। পরবর্তীতে এখানে তার দ্বিতীয় রাজধানী প্রতিষ্ঠা করেন। এ দূর্গ থেকে তিনি একে একে ২২টি পরগণা দখল করেন এবং বাংলায় স্বাধীনভাবে জমিদারী স্থাপন করেন।

দর্শনীয় স্থান
যাওয়া-আসার উপায়

ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জ যাওয়ার জন্য বাস বা ট্রেনের ব্যবস্থা রয়েছে। গুলিস্তান থেকে ঈশাখা সার্ভিস এর বাস ছাড়ে। ট্রেনে কমলাপুর থেকে কিশোরগঞ্জ যাওয়ার সুবিধা রয়েছে। কিশোরগঞ্জ পৌছানোর পর অটোরিকশা বা ইজিবাইক নিয়ে জঙ্গলবাড়ি যাওয়া যাবে।

কিশোরগঞ্জে থাকার ব্যবস্থা
কোথায় খাবেন

কিশোরগঞ্জ শহরের মাছরাঙ্গা, ধানসিঁড়ি, গাংচিল ইত্যাদি রেস্টুরেন্টের খা বার স্থানীয়ভাবে বেশ জনপ্রিয়।

মিঠামইন হাওর (Mithamain Haor)

কিশোরগঞ্জে অবস্থিত হাওর গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হাওর। বর্ষাকালে এই হাওর পর্যটকদের আকর্ষন করলেও সম্প্রতি চালু হওয়া অল ওয়েদার সড়কের (All Weather Road) কল্যাণে মিঠামইন হাওর এখন পর্যটকদের কাছে হট ফেবারিট একটা জায়গা। নিকলি, অষ্টগ্রাম, ইটনা হাওরের হাওরের পাশাপাশি এখানকার আরেকটি দৃষ্টিনন্দন হাওর হচ্ছে এই মিঠাইন হাওর যা মিঠামইন উপজেলায় অবস্থিত। দিগন্তবিস্তৃত হাওরের জলরাশি যেকোনো প্রকৃতিপ্রেমীর মনে আনন্দের ঢেউ তুলবে। মিঠামইন হাওরের উত্তরে ইটনা ও আজমিরিগঞ্জ উপজেলা, দক্ষিণে অষ্টগ্রাম উপজেলা, পূর্বে বানিয়াচং ও অষ্টগ্রাম, পশ্চিমে করিমগঞ্জ ও নিকলী উপজেলা।

হাওরবেষ্টিত এ জনপদে থইথই পানি থাকে পাঁচ থেকে ছয় মাস। পানি নেমে যাওয়ার পর সবুজ পালকে ভরে উঠে পুরো হাওর। সারা বছর হাওরের সৌন্দর্য অটুট থাকলেও মূলত বর্ষাকালই ভ্রমণপিপাসুদের মূল আকর্ষণ। হাওরে দেশের প্রকৃতিপ্রেমিকদের ভিড় হয় বর্ষায়।

কিশোরগঞ্জের হাওর গুলো এখন তুমুল জনপ্রিয় সেখানের নিকলী হাওর আর মিঠামইনের জলের বুক চিরে চলে যাওয়া মসৃণ সড়কের জন্যে যার নামকরন করা হয়েছে All Weather Road নামে। ২০১৯ অর্থবছরে ইটনা-মিঠামইন ও অষ্টগ্রামে প্রায় ৪৭ কিলোমিটার পাকা সড়ক নির্মাণ করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। এতে ব্যয় হয় এক হাজার ২৬৮ কোটি টাকা। যেন উত্তাল জলের ওপর দিয়ে কালো মসৃণ কার্পেট বিছিয়ে দিয়েছে কেউ। সড়কটি কিশোরগঞ্জের তিন হাওর উপজেলা ইটনা-মিঠামইন ও অষ্টগ্রামকে এক করেছে। সারা বছরজুড়ে এখন এই রাস্তায় চলাচল করা যাচ্ছে। রাস্তাটি হাওরের চেহারাই বদলে দিয়েছে। এটিই এখন পর্যটকদের মূল আকর্ষণ।

ভ্রমণের সেরা সময়

মিঠামইন হাওর ভ্রমণের উপযুক্ত সময় জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর। যদিও শুকনা মৌসুমের হাওরের সৌন্দর্য্য অন্য রকমের সুন্দর।

মিঠামইন হাওরে ঘোরার প্ল্যান

চামড়া বন্দর থেকে বড় ট্রলারে করে দেড় ঘন্টা এর মতো সময় লাগবে মিঠামইন হাওরে (যা মিঠাইন হাওর নামেও পরিচিত) যেতে। যাবার পথের পুরো দৃশ্যটা চমৎকার। মিঠামইন পৌছে থাকার ব্যবস্থা করে অটো নিয়ে ঘুরে দেখতে পারেন রাস্ট্রপতির বাড়ি। তারপর অলওয়েদার সড়ক ধরে ঘুরতে পারেন।মিঠামইন থেকে একদিকে অষ্টগ্রাম আর অন্যদিকে চলে গেছে ইটনা। রাস্তার দুপাশের দৃশ্য মাথা ঘুরিয়ে দেবার জন্য যথেস্ট। এর পরে যেতে পারেন ঈশা খাঁ এর বাড়ি।

ঈশা খাঁ বাংলার বারো ভুঁইয়া বা প্রতাপশালী বারোজন জমিদারদের প্রধান। ঈশা খাঁ কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার সেই সময়ের জমিদার কুইচ রাজাকে সিংহাসনচ্যুত করে বাংলো বাড়িটি র্নিমান করেন। কিশোরগঞ্জ থেকে ৬/৭ মাইল দূরে ঈশা খাঁর বাড়ী। এছাড়াও নিকলী হাওর, এগারোসিন্ধু, সত্যজিৎ রায়ের বাড়ী, দিল্লীর আখড়া, অষ্টগ্রাম ইত্যাদি দেখতে পারেন। হাওরের পুরো সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে দু–তিন দিন সময় নিয়ে বের হওয়াই উত্তম।

মিঠামইন যাওয়ার উপায়

ঢাকার মহাখালী থেকে অনন্যা পরিবহনের বাস ছাড়ে ৫ মিনিট পরে পরে, ভাড়া ২০০ টাকা। যারা সায়েদাবাদ থেকে যেতে চান তাঁরা অনন্যা সুপার বাস পাবেন। সাড়ে তিন থেকে চার ঘণ্টায় কিশোরগঞ্জ বাস স্ট্যান্ড পৌছে যাওয়া যাবে। এরপর বাস স্ট্যান্ড থেকে ১০ টাকা দিয়ে ইজি বাইকে চলে যেতে পারবেন স্টেশন রোড। সেখান থেকে ৪০ টাকায় সি.এন.জি অটোতে চামড়া বন্দর, সময় লাগবে প্রায় ঘন্টাখানেক। এই চামড়া বন্দরকে কিশোরগঞ্জের ভাটি অঞ্চলের অন্যতম হাব বলা যায়। ইটনা, মিঠামইন, নেত্রকোনার খালিয়াজুরী ইত্যাদি অঞ্চলের নৌযানগুলো এই বন্দর থেকেই ছাড়ে।

চামড়া ঘাট থেকে ১ ঘন্টা পর পর বিকেল ৫ টা পর্যন্ত মিঠামইনের উদ্দেশ্যে ট্রলার ছাড়ে। ভাড়া ৫০ টাকা। বড় ট্রলারে করে ঘন্টা দেড়েক লাগবে মিঠামইন যেতে। আপনি চাইলে একটা ট্রলার ভাড়া করে বালুখালী, হাশেমপুর ব্রীজ এবং আশে পাশের হাওড়ে ঘোরা শেষ করে তারপর মিঠামইন যেতে পারেন। এছাড়া চাইলে চামড়া বন্দর থেকে ইটনায় গিয়ে ঘুরে এসে বিকেল বেলা নৌকা ভাড়া করে মিঠামইন ঘুরে আসতে পারেন।

ট্রেনে যেতে চাইলে এগারসিন্ধুর প্রভাতী বা কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস ধরতে হবে। বুধবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন সকাল ৭ঃ১৫ টায় ঢাকা থেকে এগারসিন্ধুর প্রভাতি ছেড়ে যায় কিশোরগঞ্জের উদ্দেশ্যে। ভাড়া টিকেটের শ্রেণীভেদে ১২০-২৮০ টাকা। নিকলী ভ্রমণের জন্য ট্রেনে কিশোরগঞ্জ স্টেশনের পূর্বে গচিহাটা নেমে ইজিবাইকে যাওয়া যাবে। ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম হাওর ভ্রমণের জন্য যেতে হবে কিশোরগঞ্জ। সেখান থেকে চামড়া বন্দর হয়ে যাওয়া যাবে কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে।

কোথায় থাকবেন

রাতে থাকতে চাইলে মিঠামইন ঘাটে নেমে চলে যান জেলা পরিষদের রেস্ট হাউজে। ভাড়া পড়বে ১০০-২০০ টাকা। কেয়ার টেকার শফিকুল ০১৯৩৯৮২৭৩৪০ ও শহিদুল ০১৯৩৫৬২৬৮৫২। ব্যাগ রেখে ফ্রেশ হয়ে বিকেলে বাজার ঘাটে এসে ৭-৮ শ টাকায় নৌকা নিয়ে ঘুরে আসুন ১৯১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত থানা ইটনা।

এছাড়া কিশোরগঞ্জে অনেকগুলি হোটেল রয়েছে। যেমন রিভার ভিউ, ক্যাসেল সালাম, আল মোবারক, গাঙচিল ইত্যাদি।